মোজাম্মেল হক চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়

প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস

ভোলা জেলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার ঐতিহ্যবাহী “দেউলা” বর্তমান নাম সাচরা ইউনিয়নে রামকেশব গ্রামের দক্ষিণ বঙ্গের বিশিষ্ট জমিদার বোরহানউদ্দিন চৌধুরীর বংশে জনাব মোজাম্মেল চৌধুরী জন্ম গ্রহণ করেন।তিনি ছিলেন বোরহান উদ্দিন চৌধুরীর পুত্র। তিনি ছিলেন একান্ত শিক্ষানুরাগী একান্ত ইচ্ছা থাকা স্বত্বেয় এলাকায় কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে পারেননি। এলাকাটি ছিলো অবহেলিত, তৎকালীন শাসন ও শোষণের ও পরবর্তীতে পাকিস্তানের হানাদারদের যাতাকলে দেশের অধীকাংশ মানুষই ছিলো নিরক্ষর। তৎকালীন সামাজিক অবস্থা, অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ও আর্থিক সামর্থহীনতার কারণে ইচ্ছা থাকলে ও সাধারণ মানুষের উচ্চ শিক্ষা লাভের কোন সুযোগ ছিলনা। গ্রামের ঘুটি কয়েক মানুষ কখনো কারো বাড়ী লজিং মাষ্টার বাজাইগীর থেকে থানা সদর বা মহকুমার সদরে গিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহন করতেন। যেহেতু মোজাম্মেল চৌধুরী সাহেব ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও উচ্চ শিক্ষা লাভ করতে পারেননি। তাই তার একান্ত ইচ্ছা ছিলো এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার। কিন্তু তার সেই ইচ্ছা পূরণ করার আগেই তিনি মৃত্যু বরণ করে। তার সে অসমাপ্ত ইচ্ছা পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসেন, তারই একমাত্র সুযোগ্য পুত্র জনাব শহিদুল হক নকিব চৌধুরী। শৈশবে তাকে লেখাপড়া করার জন্য ৭-৮ মেইল দূরে মাইনর স্কুলে পরে ভোলা সদরে এবং বরিশালে গিয়ে পড়াশোনা করতে হয়েছে। বরিশাল বি.এম কলেজ থেকে বি.এসসি পাস করার পর তিনি দেশে ফিরে এসে অত্র এলাকার বর্শিয়ান মুরুব্বি ও শিক্ষানুরাগীদের সাহায্য সহযোগিতায় নিজ অর্থে জমি ক্রয় করেন এবং বিদ্যালয় গৃহ নির্মান করে “ মোজাম্মেল হক চৌধুরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়” নামে এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন। প্রতিষ্ঠানটির নির্মান কাজ ১৯৭০ সনে দরুন প্রাইমারী স্কুলের পূর্ব দক্ষিণ দিকে খাল পাড়ে উত্তর দক্ষিণ দিকে লম্বা করে বিশাল বিদ্যালয় গৃহটি নির্মান করা হয়। ৪-৫ বছর পর সেটিকে বর্তমান স্থানে নিজস্ব জমিতে সরিয়ে আনা হয়। প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন জনাব শহীদুল হক নকীব চৌধুরী জমি কেনা, ঘর তৈরি করা সহ তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টি স্বীকৃতি পাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষকগণের পারিতোষিক তিনি নিজেই প্রদান করতেন। স্বীকৃতি পাওয়ার পরেও তার নিজ অংশের বেতন শিক্ষকগণের মধ্যে বিতরণ করে দিতেন। বিদ্যালয়টি পরিচালনার ব্যাপারে যারা তার সঙ্গে শিক্ষতার পেশায় ত্যাগ ও তিতিক্ষার মাধ্যমে অংশ গ্রহণ করে শিক্ষার্থীর মাঝে শিক্ষার আলো বিতরণ করেছেন তাদের মধ্যে জনাব মরহুম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, শাহ আলম মাষ্টার, বাবু নিখিল চন্দ্র, মৌলভী মোতাহার উদ্দিন, জনাব মজিবুল হক মাষ্টার সহ অন্যান্য শিক্ষক বৃন্দের নাম উল্লেখযোগ্য। অপর দিকে বিদ্যালয়ের স্থাপন ও উন্নয়নে যাহারা যথেষ্ট উৎসাহ ও অবদান রাখেন তাদের মধ্যে সর্ব জনাব মরহুম সুফিয়ার রহমান মৃধা, মরহুম আব্দুল জলিল মৃধা, মরহুম খোরশেদ আলম মৃধা, মরহুম লুৎফুর রহমান মৃধা, মরহুম শামসুল হাওলাদার, মরহুম চাঁন মিয়া হাওলাদার, মরহুম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মরহুম আব্দুল মতিন চৌধুরী, মরহুম গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মরহুম নাদেরেরজ্জামান চৌধুরী প্রমুখের নাম উল্লেখযোগ্য । বিদ্যালয়টি ১৯৭১ সনে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৭৩ সনে নিন্ম মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসাবে প্রথম স্বীকৃতি লাভ করে। পরবর্তীতে ১৯৯৫ইং সনে মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এরপর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। স্থানীয় জনগনের নানা রকম সহযোগিতায় বিদ্যালয়টি পূর্ণ্রুপ লাভ করেছে এবং শ্রীবৃদ্ধি ঘটছে। বিদ্যালয়ে পরিমাপ মতো খেলার মাঠ আছে দুটি তিন তলার ফাউন্ডেশন সহ একতলা পাকা ভবন আছে ও একটি টিনের ঘর আছে। বর্তমানে সরকার কর্তৃক একটি চার তলা ভবন নির্মান প্রক্রিয়াধীন আছে যাহা স্থানীয় এমপি জনাব আলহাজ্ব আলী আজম মুকুল এমপি মহোদয়ের একান্ত চেষ্টায় সম্ভব হয়েছে। বিদ্যালয়ের উত্তর পার্শ্বে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় অবস্থিত। বিদ্যালয়ের তিন দিকে গ্রাম ও পিছনের দিকে মনোরম পরিবেশে খাল এবং স্কুলের উত্তর দিকে দরুন বাজার নামে একটি বড় বাজার আছে। সব মিলিয়ে অত্যন্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বিদ্যালয়টি অবস্থিত। বর্তমানে প্রতিষ্ঠাতা জনাব শহীদুল হক নকীব চৌধুরীর কনিষ্ঠ পুত্র কৃতি সন্তান ইঞ্জিনিয়ার জনাব মোঃ মইনুল হক চৌধুরী বি.এসসি (বিবিএ,এমবিএ) বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি তিনি বিদ্যালয়ের উন্নয়ন মূলক কাজে আন্তরিক অবদান রেখে আসছেন।